চাউল সেবনের সাথে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক
এম এ সোবহান || Friday 20 September 2024 ||চাউল (Oryza sativa) পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষের শর্করার প্রাথমিক উৎস। ভাত, রুটি এবং আরো অনেক সুস্বাদু খাদ্য হিসাবে সেবন করা হয়। এশিয়া মহাদেশেই সর্বাধিক চাউল ব্যবহৃত হয়। বছরে মাথা পিছু ১০০ কেজি চাউল ব্যবহৃত হয়। চাউলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স-জিআই (glycemic index-GI) শর্করা জাতীয় অন্যান্য খাদ্যের চেয়ে বেশি। যার ব্যপ্তি ৪৮-১৬০। চাউল সেবনের সাথে ডায়াবেটিসের একটা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে। রক্তে উচ্চ মাত্রায় গ্লুকোজ এবং ইনস্যুলিন রেসিট্যান্ট তথা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সাথে উচ্চ মাত্রার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্বলিত চাউল সেবনের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
খাদ্য গ্রহণের পরে রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধির হার বিবেচনায় ঐ খাদ্যের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) গণ্য করা হয়। গ্লুকোজ জিআই মান ১০০।
লাল চাউলের চাইতে সাদা চাউলের জিআই মাত্রা বেশি। তবে দেখতে সুন্দর এবং খেতে স্বাদ বেশি হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ সাদা চাউল পছন্দ করে। অধিক পরিমাণে সাদা চাউল সেবনের ফলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বেড়ে যায়। ধানের জাত ভেদে উৎপাদনের পরিবেশ, প্রক্রিয়াজাত করণের ভিন্নতার কারণে এবং রান্নার পার্থক্যের কারণে চাউলের জিআই মান ভিন্ন হয়। সাধারণ ভাবে পুষ্টি মানের বিবেচনায় চাউলে শর্করা (৮০%), আমিষ-৮% , আঁশ-৩% এবং চর্বি-৩% ।
নিম্ন জিআই সম্পন্ন চাউল সেবনের মাধ্যমে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রকোপ কমানো যেতে পারে। নিম্ন জিআই সম্পন্ন সাধারণত মোটা, শক্ত এবং খসখসে হয়। পক্ষান্তরে উচ্চ জিআই সম্পন্ন চাউল আকারে ছোট, সাদা, মসৃণ এবং ভাত মোলায়েম হয়। শারীরিক পরিশ্রম বর্জিত সৌখিন জীবন-যাপন এবং উচ্চ মাত্রার জিআই সমৃদ্ধ সরু চাউল সেবনে অতিরিক্ত মেদ টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের প্রবনতা বেড়ে যায়। ধানের জাতের ভিন্নতা, চাউলের আকার, আশেঁর পরিমাণ, প্রক্রিয়াজাত করুন এবং রন্ধন প্রনালীর উপর চাউলের জিআই মান নির্ভর করে। আস্ত চাউলের জিআই মান চাউলের গুড়ার চাইতে কম। সাধারণত রান্না করা চাউলের জিআই মান ৬৪-৯৩।
স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড ধান প্রবর্তনের পর থেকে বিশ্বব্যাপি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে। যেমন ১৯৮০ সালে বিশ্বব্যাপি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সংখ্যা ছিল ১০৮ মিলিয়ন যা ২০২০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৬৩ মিলিয়ন। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৫০ সালে এ সংখ্যা দাড়াবে ৭০০ মিলিয়নে (https://www.researchgate.net-GlycemicIndex of DiverseRiceGenotypesandRice Products--).
চাউল সেবনের সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। এ প্রবনতা চীন, ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, জাপান এবং বাংলাদেশে লক্ষণীয়।
নিম্ন জিআই সম্পন্ন লাল চাউল সেবন টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রবনতা কমাতে সহায়তা করতে পারে। রান্নার প্রক্রিয়া যেমন রান্নার সময়, রান্নার পদ্ধতি এবং রান্নার উপাদানের সাথে জিআই মানের ধনাত্মক সম্পর্ক রয়েছে। পানি দিয়ে ফুটিয়ে রান্নার চাইতে মাইক্রোওয়েভে এবং ইলেকট্রিক রান্নায় খাদ্যের জিআই বৃদ্ধি পায়। একই ভাবে খৈ এবং মুড়ির জিআই বেশি। সাদা চাউলের মুড়ির জিআই ৭৪ এবং চাউলের পিঠার জিআই ১২৮।
ধান উৎপাদনের পরিবেশ যেমন আলো, বাতাস, তাপমাত্র, মাটির উপাদান এবং বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ ধানের জিআই মাত্রাকে প্রভাবিত করে। সেজন্য উচ্চ মানসম্পন্ন কম জিআইযুক্ত ধান উৎপদন করতে যথাযথ জৈব ও প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
২৫০০ জাতের ধানের উপর এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, তাদের জিআই মান ৪৮-১৬০। খাদ্যের জিআই মান বিবেচনায় তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন নিম্ন জিআই (৫৫+ অথবা তার কম), মধ্যম জিআই (৫৬-৬৯) এবং উচ্চ জিআই (৭০-অথবা তার বেশি) ।
প্রধানত তিন শ্রেণীর ধান যেমন—ইন্ডিকা, জাপোনিকা এবং জাভোনিকার জিআই মানের ভিন্নতা আছে। সাধারণ ভাবে ইন্ডিকার জিআই মান কম এবং জাপোনিকা এবং জাভোনিকার জিআইমান বেশি। জাপোনিকার ধান ছোট এবং গোলাকার। জাভোনিকার ধান লম্বা।
বাংলাদেশে ধানের মধ্যে বিআর-১৬ এবং পাজাম (৫৫এর নিচে), অধিকাংশ জাত মধ্যম গ্লাইসোমিক (৫৬-৬৯)এর মধ্যে যেমন বিআর-১১,বিআর-২৬,ব্রিধান-৩০ এবং ব্রিধান-৪০। ব্রিধান-২৯ এবং চিনিগুড়া উচ্চ জিআই (৭০ এর উপর গ্রপের মধ্যে (https://ijlrsfimaweb.info)। অন্য আর একটি পরীক্ষায় দেখা যায় বিআর-৩, বিআর-১১, বিআর-১৬,ব্রিধান-২৮ এবং ব্রিধান-৪০ নিম্ন জিআই গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত (https://bari.gov.bd)
বিআর-১৬, ব্রিধান -৪৬ এবং ব্রিধান-৬৯, জাতগুলি নিম্ন জিআই দলভুক্ত এবং অন্য ৫০ জাত উচ্চ জিআই সম্পন্ন (https://www.academia.edu)। উদ্ভাবিত ব্রিধান ১০৫ জাতটি নিম্ন জিআই দলভুক্ত(https://www.dhakatribune.com)। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রকোপ কমাতে নিম্ন জিআইসম্পন্ন আরো ধানের জাত উদ্ভাবন ও চাষাবাদ সম্প্রসারণ করতে হবে। খাদ্য প্রক্রিয়া করণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে যেন নিম্ন জিআই সম্পন্ন-খাদ্য প্রস্তুত করা যায়।